হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)- ২য় পর্ব

আদর্শ পোস্ট ফরম্যাট

রচনাঃ  প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

নবী ইবরাহীম :
আদম, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা প্রমুখ দু’তিন জনের ব্যতিক্রম বাদে নূহ (আ.) সহ অন্যান্য সকল নবীর ন্যায় ইবরাহীমকেও আমরা ধরে নিতে পারি যে, তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুঅত লাভ করেন। উম্মতে মুসলিমার পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) পশ্চিম ইরাকের বছরার নিকটবর্তী ‘বাবেল’ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এই শহরটি পরবর্তীতে সুলায়মান (আ.)-এর সময়ে জাদুর জন্য বিখ্যাত হয় {বাক্বারাহ ২/১০২}।

এখানে তখন কালেডীয় জাতি বসবাস করত। তাদের একচ্ছত্র সম্রাট ছিলেন নমরূদ। যিনি তৎকালীন পৃথিবীতে অত্যন্ত উদ্ধত ও অহংকারী সম্রাট ছিলেন। তিনি প্রায় চারশো বছর রাজত্ব করেন এবং শেষ পর্যন্ত নিজে ‘উপাস্য’ হবার দাবী করেন।*৩* আল্লাহ তারই মন্ত্রী ও প্রধান পুরোহিত ‘আযর’-এর ঘরে বিশ্বনেতা ও বিশ্ব সংস্কারক নবী ইবরাহীমকে মুখ্যত: কালেডীয়দের প্রতি প্রেরণ করেন। ইবরাহীমের নিজ পরিবারের মধ্যে কেবল সহধর্মিনী ‘সারা’ ও ভ্রাতুষ্পুত্র ‘লূত’ মুসলমান হন।

স্ত্রী ‘সারা’ ছিলেন আদি মাতা বিবি হাওয়ার পরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী মহিলা। তিনি ১২৭ বছর বয়সে ‘হেবরনে’ মৃত্যু ববণ করেন ও সেখানেই কবরস্থ হন।*৪* সারার মৃত্যুর পরে ইবরাহীম ক্বানতূরা বিনতে ইয়াক্বতিন ও হাজূন বিনতে আমীন নামে পরপর দুজন নারীকে বিয়ে করেন এবং ৬+৫=১১টি সন্তান লাভ করেন।*৫* তিনি প্রায় দু’শো বছর জীবন পান বলে কথিত আছে।

উল্লেখ্য যে, হযরত ইবরাহীম (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ২৫টি সূরায় ২০৪টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।*৬* নিম্নে আমরা আয়াত সমূহ থেকে নিয়ে সাধ্যতম সাজিয়ে কাহিনী আকারে পেশ করার চেষ্টা পাব ইনশাআল্লাহ।-

সামাজিক অবস্থা:
ইবরাহীমের আবির্ভাবকালীন সময়ে কালেডীয় সমাজ শিক্ষা ও সভ্যতায় শীর্ষস্থানীয় ছিল। এমনকি তারা সৌরজগত নিয়েও গবেষণা করত। কিন্তু অসীলা পূজার রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা আল্লাহকে পাবার জন্য বিভিন্ন মূর্তি ও তারকা সমূহের পূজা করত। হযরত ইবরাহীম উভয় ভ্রান্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে প্রেরিত হন।

ইবরাহীম (আ.)-এর দাওয়াত :
মূর্তিপূজারী কওমের প্রতি-
সকল নবীর ন্যায় ইবরাহীম (আ.) স্বীয় কওমকে প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

‘স্মরণ কর ইবরাহীমকে, যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ’। ‘তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর নিকটে রিযিক তালাশ কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই নিকটে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ {আনকাবূত ৩৩/১৬-১৭}।

ইবরাহীম (আ.) উক্ত দাওয়াতের মধ্যে কেবল আল্লাহর স্বীকৃতি কামনা করেননি। বরং স্বীকৃতির ফলাফল আশা করেছিলেন। অর্থাৎ তারা যেন আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে মান্য করে এবং কোন অবস্থায় তা লংঘন না করে। কেননা স্বীকৃতির বিপরীত কাজ করা তা লংঘন করার শামিল।

ইনশাআল্লাহ চলবে …

*৩* তারীখুল আম্বিয়া পৃঃ ৬৮।
*৪* তারীখুল আম্বিয়া, পৃঃ ৭৪।
*৫* আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১/১৬৪ পৃ:।
*৬* যথাক্রমে সূরা বাক্বারাহ ২/১২৪-১৩৩=১০; ১৩৫, ১৩৬, ১৪০, ২৫৮, ২৬০; আলে ইমরান ৩/৩৩, ৩৪, ৬৫-৬৮=৪; ৮৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭; নিসা ৪/৫৪, ১২৫, ১৬৩; আন‘আম ৬/৭৪-৮৩=১০; ১৬১; তওবাহ ৯/৭০, ১১৪; হূদ ১১/৬৯-৭৬=৮; ইউসুফ ১২/৬, ৩৮; ইবরাহীম ১৪/৩৫-৪১=৭; হিজর ১৫/৫১-৬০=১০; নাহ্ল ১৬/১২০-১২৩=৪; মারিয়াম ১৯/৪১-৫০=১০; ৫৮; আম্বিয়া ২১/৫১-৭৩=২৩; হজ্জ ২২/২৬, ৪৩, ৭৮; শো‘আরা ২৬/৬৯-৮৯=২১; আনকাবূত ২৯/১৬-২৭=১২; ৩১; আহযাব ৩৩/৭; ছাফফাত ৩৭/৮৩-১১৩=৩১; ছোয়াদ ৩৮/৪৫-৪৭=৩; শূরা ৪২/১৩; যুখরুফ ৪৩/২৬, ২৭; যারিয়াত ৫১/২৪-৩৪=১১; নাজম ৫৩/৩৭; হাদীদ ৫৭/২৬, ২৭; মুমতাহানা ৬০/৪-৬=৩; আ‘লা ৮৭/১৯, সর্বমোট = ২০৪টি।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান